পিপলস ম্যাগাজিন: দেশজুড়ে চলতে থাকা বিক্ষোভ, মৃত্যু, আন্দোলনের ঢেউয়ে স্পষ্টতই চাপে কেন্দ্রীয় সরকার। তার ছাপ দেখা গেল রবিবার। বোঝা গেল, কেন এতদিন এনআরসি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অমিত শাহই শুধু কথা বলছিলেন। কোনো সমস্যা তৈরি হলে, পালটি খাওয়ার কাজ মোদিকে দিয়ে করানোরই পরিকল্পনা ছিল বিজেপি ও তাদের পেছনে থাকা দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজির।
এদিন দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিল্লির রামলীলা ময়দানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তাঁর সরকার এনআরসি করেনি, তা নিয়ে মন্ত্রিসভা বা সংসদে আলোচনাও করেনি। এনআরসির বিষয়টি প্রথম এসেছিল পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের সময়। আর অসমে এনআরসি হয়েছে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে। বস্তুত কথাটি অর্ধসত্য। তাঁর স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় স্পষ্ট বলেছিলেন, সরকার দেশজুড়ে এনআরসি করবে।
শুধু তাই নয়। এদিন একের পর এক মিথ্যা দিয়ে মালা গাঁথার চেষ্টা করেন ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতিওয়ালা এই হিন্দুত্ববাদী নেতা। মোদি বলেন, নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে ১৩০ কোটি ভারতীয়র কোনো সম্পর্ক নেই। এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণাও তাঁরা করেননি। এগুলোর মধ্যে দিয়ে কারও অধিকার তিনি কেড়ে নেবেন না। এটাও অর্ধসত্য। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ১১ এপ্রিল ও ১ মে, পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ ও বনগাঁয় প্রচারে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছিলেন। এনআরসি করার পর অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানো হবে বলেও দাবি করেছিলেন। অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ও বলেছিলেন। দুদিন আগেই এই সংক্রান্ত বিজেপির একটি পুরনো টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে।
মোদি এদিনের জনসভায় বলেন, আরবান নকশালরা মুসলিমদের ভুল বোঝাচ্ছে, এনআরসি করে ভারতীয় মুসলমানদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে। কিন্তু এরকম কিছুই হবে না, দেশে কোনো ডিটেনশন সেন্টারও নেই। অথচ গত জুলাই মাসে ইকনমিক টাইমস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সিনিয়র আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ প্রকাশ করেছিল, প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে অন্তত একটি করে আধুনিক সুযোগসুবিধা যুক্ত ডিটেনশন সেন্টার তৈরির নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিদেশি বন্দিদের জন্য একটি বিশেষ সেন রাখার কথাও বলা হয়েছিল।
মোদির দাবি অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট আগে এনআরসির পক্ষে ছিলেন। এখন ভোট হারানোর ভয়ে উলটো সুরে কথা বলছেন।
এদিন বিক্ষোভকারীদের অহিংসার পথ নেওয়ার কথা বলেন মোদি। পাশাপাশি পুলিশদের পাশেও দাঁড়ান তিনি। বলেন, নিজেদের কাজ করার জন্য তাঁদের জনগণের ঘৃণার শিকার হতে হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, পুলিশদের বিরুদ্ধে হিংসায় ইন্ধন যুগিয়ে কী লাভ হচ্ছে।
সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে চাপে পড়ার সব লক্ষণ স্পষ্ট। কিন্তু কোনো সরকারি ঘোষণা এখনও ভারতবাসী পেলেন না।