Home খবর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর এবিভিপির আক্রমণ ও প্রতিরোধ: বিশেষ রিপোর্ট, ভিডিও

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর এবিভিপির আক্রমণ ও প্রতিরোধ: বিশেষ রিপোর্ট, ভিডিও

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর এবিভিপির আক্রমণ ও প্রতিরোধ: বিশেষ রিপোর্ট, ভিডিও
0
সৃজনী কর
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

কমিউনিস্ট আন্দোলনের মহান শিক্ষক মাও-সে-তুং ছাত্রদের সম্পর্কে একটি কথা বলেছিলেন যে ছাত্ররা অনেকটা খরগোশের মতো, ভুমিকম্প হলে আগে টের পায়। আজ সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ছাত্র আন্দোলন আরো একবার সেই কথাটাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: গণ আন্দোলনের চাপে এনপিআর স্থগিত রেখে মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিলেন সেটাই এনআরসি-র প্রথম ধাপ

দেশের মানুষের থেকে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া রাষ্ট্র এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গত ১৩ডিসেম্বর থেকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে অল ইন্ডিয়া এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতা করে। টানা দুদিন ব্যাপী আন্দোলন চলার পর গত ১৫ ডিসেম্বর জামিয়ার ছাত্রছাত্রীদের উপর গুলিবর্ষণ তথা সমস্ত রকমের পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষা বয়কটের কর্মসূচি নেয় এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামনে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শুরুর দিকে যথারীতি দুএকজন এবিভিপির ছাত্র তাদের স্বভাবোচিত টিকাটিপ্পনি দিতে আরম্ভ করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে। যাইহোক, ছাত্ররা এসবের পরোয়া না করে তাদের সভা চালিয়ে যায় এবং পলিটিকাল সায়েন্স ও আরো অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষা সফল ভাবে বয়কট করা হয়। প্রায় টানা দুঘন্টা প্রতিবাদ চলাকালীন হঠাৎ ৫-৬জন এবিভিপি আচমকা ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা শুরু করে। মজার কথা হল এবার দিল্লি পুলিশ শুধু নীরব পর্যবেক্ষকের ভূমিকাতেই থাকেনি, রীতিমতন লাথি-সোটা যোগান দিয়ে তাদের আচ্ছা মতন সাহায্য করেছে আমাদের সাচ্চা-দিলের দিল্লি পুলিশ। আর নিজেরাও লাঠিচার্জ করতে ভোলেনি। কিছু ছাত্রীকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাবার দৃশ্য তো আমাদের সকলেরই পরিচিত। কথাগুলো ক্যামনক্যামন লাগলেও একবার ভেবে দেখুন যে ৫-৬জন লোক কী করে বিনা পুলিশের মদতে ৩০০ জন লোকের গায়ে হাত দেবার সুযোগ পায়! ইন্দ্রপ্রস্থ কলেজের এক ছাত্রী মুদিতার কথায়,”যখন দুজন এবিভিপি (মহিলা) আমার চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল, মহিলা পুলিশেরা সেখানে পাথরের মতো দাঁড়িয়েছিল, একটুও নড়েনি।“ এবিভিপির এই গুণধরী দুই মেয়ে মুদিতার চশমা ভেঙ্গে দিয়ে যখন তাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তখন মহিলা কনস্টেবলদের বেশ খুশিখুশি দেখাচ্ছিল, তার মতে। DUSU-এর প্রেসিডেন্ট আক্সিত দাহিয়া(এবিভিপি)র উপস্থিতিতে এসব হয়েছে, সে নিজেও হাত মিলিয়েছে বিন্দু (পঞ্জাবি বিভাগ এবং ভগৎ সিং ছাত্র একতা মঞ্চের সদস্য) মাথায় পেছন থেকে সজোরে আঘাত করতে। ভারত শর্মা,এবিভিপির রাজ্য কমিটির এক্সিকিউটিভ সদস্য, যাকে আরএসএস-এর ভলেন্টিয়ার হিসেবেও অনেকে চেনে, তাকে তো দেখা যাচ্ছে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে দিতে সিধা ছাত্রের বুকে লাথি দিতে।আবার তাকে পুলিশের পোশাক পরে জামিয়ার ভেতরেও ছাত্রদের পেটাতে দেখা গেছে। পুলিশ এবং এবিভিপির এত সুন্দর গাটবন্ধন যদিও নতুন কিছু নয় এখানে। সেদিন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে একএকজন ছাত্রকে টার্গেট করে মপিটিয়েছে তারা।ভারতমাতার সন্তানদের গুন্ডামির শিকার হয়েছে বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের সুজিত (ডিএসইউ), ইতিহাস বিভাগের নিশান্ত, রামজাস কলেজের পলিটিকাল সায়েন্স বিভাগের অভিজ্ঞান, ল বিভাগের আশুতোষ সহ আরো অনেকেই। কিন্তু এত কিছুর পরেও ছাত্ররা আরো বেশি সংখ্যায় জড়ো হয়ে “এন আর সি কা অউর এক নাম ইসলামোফোবিয়া” শ্লোগান তুলে প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে। লাগাতার ৩ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পর প্রতিবাদ প্রতিরোধের দিকে মোড় নিতে যায়, বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী সহ কিছু সংগঠনের লোকেরা “ভারতমাতাকিজয়, বন্দেমাতরম” বলে চিৎকার করতে থাকা ছাত্রদের দিকে এগিয়ে যায়। “গো ব্যাক এবিভিপি” শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে।সংঘর্ষের মুখোমুখি এক পরিস্থিতিতে ডুটার কিছু শিক্ষক এবং কিছু বাম-মুখোশধারী সংগঠন ছাত্রদের প্ররোচনা দেয় ক্যাম্পাস ছেড়ে যন্তরমন্তরে গিয়ে আরো বড়ো বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য। তাদের যুক্তি এই যে, ক্যাম্পাসে মিছামিছি এবিভিপির সাথে খণ্ডযুদ্ধে না ফেঁসে এনারসি-সিএএ-র সামগ্রিক বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসআইও(স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশন)-এর রানিয়া (রামজাস কলেজের পলিটিকালসায়েন্স বিভাগ) সহ এই নিয়ে ছাত্রছাত্রী-প্রফেসরদের মধ্যে দীর্ঘ বিতর্কের পর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাসে থাকার পক্ষপাতী ছিল। বিতর্ক চলাকালীন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অহিংস ভাবে বিক্ষোভভের সপক্ষে কিছু প্রফেসর বক্তব্য রাখলে বেশ কিছু ছাত্র তার বিরোধিতা করে। শেষমেষ ছত্রভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় সব ছাত্রছাত্রীরা একযোগে পুলিশ ভ্যানে যন্তরমন্তরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পুলিশ যথারীতি মাঝপথে সিভিল লাইন মেট্রো স্টেশনে নামিয়ে দেয়।পরের দিন আরো কিছু সংগঠন( পিঞ্জরা তোড)-এর উদ্যোগে দুপুর ১টা থেকে ৭ টা অবধি বিক্ষোভ সমাবেশ চলে এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনের দিকে মার্চ করে অল ইন্ডিয়া এনআরসি এবং সিএএ বিরুদ্ধে দিল্লি ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা জামিয়া, আলিগর, জেএনইউ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সংহতির হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই দিনও ল বিভাগে চন্দ্রদীপ নামের এক ছাত্রের গায়ে হাত তোলে গো রক্ষকেরা। শোনা যায় প্রতিবাদ শেষ হওয়ার পরও এবিভিপির ছাত্ররা লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৮ তেও ল-বিভাগে পরীক্ষা বয়কট করে কিছু ছাত্র বিক্ষোভ দেখায় এবং আজ জামিয়ার জয়েন্ট স্টুডেন্ট ফ্রন্টের নেতৃত্বে দিল্লির সমস্ত নাগরিক সমাজ লালকেল্লা থেকে শুরু শহিদ পার্কের দিকে মহামিছিলে সক্রিয় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পড়ুয়ারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার।

সবশেষে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এর পদ্ধতি নিয়ে নানা মতভেদের মাঝখানে আমাদের মনে রাখা উচিৎ ডিমিট্রিভের সেই বিখ্যাত উক্তি, যার মোদ্দা কথা ফ্যাসিবাদ যখন এসে গণতন্ত্রের টুঁটি চিপে ধরে, তখন গণতন্ত্রের পক্ষে তাকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আটকানো সম্ভব নয়, তখন তাকে আটকাতে চাই জনগণের তথা শ্রমজীবী মানুষের জঙ্গি প্রতিরোধ।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *