Home ফিরে দেখা বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/২

বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/২

বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/২
1
আশরাফুল আমিন

(অধ্যাপক ডঃ এম.এস জয়প্রকাশকের লেখা গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘Hindu Violence against Buddhism in India has NO Parallel’ বাংলায় অনুবাদ করেছেন আশরাফুল আমিন বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচারের যে সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং সেই ইতিহাস চাপা দেওয়ার জন্য বৌদ্ধ ধর্মকে ব্রাহ্মণ্যবাদ বগলদাবা করে হিন্দুধর্ম বলে চালিয়ে দিয়েছে, সেগুলো আমাদের জানা দরকার)

প্রথম পর্বের পর

অব্রাহ্মণদের পুড়িয়ে হত্যা: 

যতখানি নৃশংসতায় ও বেপরোয়াভাবে নাগার্জুনকোন্ডার স্থাপত্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছে তা আক্ষরিক অর্থেই ভয়ঙ্কর ও বেদনাদায়ক। এগুলো দেখে মনে হওয়ার কোন  কারণ নেই যে ডাকাতেরা সম্পত্তি হাতড়ানোর জন্য এগুলো করেছে। বরং বৌদ্ধচিহ্ন যেমন  স্তম্ভ, মূর্তি, ভাস্কর্য ধুলিস্যাৎ করে দেওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। আঞ্চলিক সংস্কৃতি ইঙ্গিত দেয় যে ব্রাহ্মণ পন্ডিত শঙ্করাচার্য তাঁর একদল শিষ্যকে নিয়ে নাগার্জুনকোন্ডা আসেন এবং বৌদ্ধ স্মৃতিসৌধগুলি ধ্বংস করে দেন। যে জমির উপর বৌদ্ধ  ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে সেই জমিটি  শঙ্করাচার্য ধর্মীয় উপঢৌকন হিসাবে পেয়েছিলেন।

কেরলে শঙ্করাচার্যের  ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন কুমারিলা ভট্ট। ইনি বৌদ্ধদের ঘোষিত শত্রু। এরা দুজনে যৌথভাবে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে  ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করেন। অব্রাহ্মণদের পুড়িয়ে মারার দৃশ্য শঙ্করাচার্য  তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন। এইসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া যায় ‘শঙ্কর  দিগ্বিজয়’ বইতে। 

কেরলে ধধ্বংসলীলা:

কুমারিলা ভট্ট উজ্জয়িনীর রাজা শুদ্ধভাননকে প্ররোচিত করেছিলেন যাতে বৌদ্ধদের পুরোপুরিভাবে নির্মূল করা হয়। শুদ্রকার মির্চাকাতিকা থেকে আমরা জানতে পারি যে উজ্জয়িনীর রাজার শ্যালক অজস্র বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে নিগ্রহ করেন। তাদেরকে বলদ হিসাবে ব্যবহার করা হত। নাকের মধ্যে তার ঢুকিয়ে কাঁধে  জোয়াল ফেলে টানতে বলা হত।

কেরালপথির নথিপত্র থেকে  প্রমাণ পাওয়া যায় যে কেরালা থেকে বৌদ্ধধর্ম উৎখাত করেছিলেন কুমারিলা। শঙ্করের কর্মকাণ্ড নিয়ে  স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন,

“তর্কে হারিয়ে শঙ্কর অগণিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। শঙ্করের এই কাজটি উগ্র ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কী বলতে পারি ?” (Complete Works of  Swami  Vivekananda, Vol.VII. p. 118, Calcutta, 1997).

কেরালায় বৌদ্ধদের ইতিহাস:

কেরালায় বহু জায়গা রয়েছে যে জায়গাগুলোর নামের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ‘পাল্লি’ শব্দটি। কারুঙ্গাপাল্লি, কার্তিক পাল্লি, পাল্লিকাল, পাল্লিপুরম এমনই কিছু জায়গার উদাহরণ। এই ‘পাল্লী’ শব্দের অর্থ হল বৌদ্ধবিহার।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কেরালায় ছিল ১২০০ বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য। আজকের দিনেও কেরালার বিদ্যালয়গুলোকে বলা হয় এঝুথুপাল্লি বা পাল্লিকুড়াম। কেরালায় ক্রিষ্টান ও মুসলিমররা তাদের  উপাসনালয়কে ‘পাল্লী’ বলে থাকে। হিন্দু নাৎসিবাদী শঙ্কর ও কুমারিলার নেতৃত্বে পাল্লিগুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

তারা ১২০০ বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দিয়ে কেরালাকে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রদেশে পরিণত করে। প্রচুর বৌদ্ধবিহার পরিণত হল হিন্দু মন্দিরে। শুদ্র হওয়ার অজুহাতে বেশিরভাগ মানুষকেই সেইসব মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না। তারপর থেকেই কেরালার আদি  অধিবাসী যেমন এজাভা, পুলায়া প্রভৃতি জাতিকে ব্রাহ্মণ্যবাদী  জাতিভেদ প্রথার ভারী বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।(চলবে)

Share Now:

Comment(1)

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *