পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ইতিমধ্যে আইনে পরিণত হওয়া নাগরিকত্ব বিল ধর্মনিরপেক্ষ নাকি সাম্প্রদায়িক, তা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল। তার মধ্যেই বুধাবার লোকসভায় পেশ হল একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ খসড়া ‘তথ্য সুরক্ষা বিল’। বিলটি খতিয়ে দেখার জন্য একটি যৌথ সংসদীয় সিলেক্ট প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
সংসদে তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি থাকা সত্ত্বেও, সেটিকে এড়িয়ে গিয়ে নতুন কমিটির হাতে দেওয়া হল খতিয়ে দেখার বার। মোট ৩০ জনের ওই কমিটিতে থাকছেন লোকসভার ২০ জন সদস্য। তাদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। মজার বিষয় হল, বিরোধী পক্ষের ৯ সদস্যের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়ের নাম থাকলেও, দলের সংসদীয় নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যক্ষকে বলেন সৌগতবাবু ব্যস্ত থাকায় মহুয়া মৈত্রকে ওই কমিটির সদস্য করতে।
যাই হোক, মূল কথা হল- এই বিল আইনে পরিণত হলে, ভারতের কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য কোন সংস্থা দেখতে পারবে/কতটা দেখতে পারবে, তা সরকার ঠিক করবে। এ বিষয়ে কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি সামাজের নানা অংশের থেকে এ বিষয়ে মতামত নিয়ে রিপোর্ট দেয়। যদিও লোকসভায় যে বিলটি পেশ হয়েছে, সেটি নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হবে না। বিল পেশের দিন সেই দাবি তুলেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস।
এর আগে সু্রিম কোর্ট একটি মামলায় বলেছিল, সরকার তথ্য সুরক্ষা নিয়ে আইন পাস করতে পারে। সে বিষয়ে কিছু গাইডলাইনও দিয়েছিল আদালত। এই বিল সেই গাইড লাইনে উত্তীর্ণ হতে পারে কিনা, তা সময় বলবে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের বিল আইনে পরিণত হলে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সরকার জনগণের ব্যক্তিগত জীবনে নজরদারি চালাতে চায়। যদিও সরকারের দাবি ‘বেআইনি কার্যকলাপ’ রুখতেই এ ধরনের আইন সময়ের দাবি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার বিদেশি সংস্থাদের লোভ দেখিয়েছেন, ভারতে তথ্য খুব সস্তা। তাই তারা এখানে এসে ব্যবসা করতেই পারে। এনআরসি, এনপিআর, ক্যাব- আসলে জনগণের তথ্য বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করার ছক বলেও ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। দুনিয়ার বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি ভারতের জনগণের বিশাল তথ্য ভাণ্ডারের নাগাল পেতে খুবই আগ্রহী। এ ব্যাপারে মোদী সরকারের তাড়াহুড়ো দেখে মনে হতে পারে, তথ্য বিনিময়ের চুক্তি এবং আর্থিক লেনদেনও হয়ে রয়েছে। ক্যাবের পরদিনই তথ্য সুরক্ষা বিল পেশে সেই সন্দেহই আরও জোরদার হল।
আগামী বাজেট সেশন শেষ হওয়ার আগেই যৌথ সংসদীয় প্যানেল তার রিপোর্ট পেশ করবে।