Home ফিরে দেখা বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/১

বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/১

বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচার ও বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ইতিহাস/১
0
আশরাফুল আমিন

(অধ্যাপক ডঃ এম.এস জয়প্রকাশকের লেখা গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘Hindu Violence against Buddhism in India has NO Parallel’ বাংলায় অনুবাদ করেছেন আশরাফুল আমিন। বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচারের যে সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং সেই ইতিহাস চাপা দেওয়ার জন্য বৌদ্ধ ধর্মকে ব্রাহ্মণ্যবাদ বগলদাবা করে হিন্দুধর্ম বলে চালিয়ে দিয়েছে, সেগুলো আমাদের জানা দরকার।)

আফগানিস্তানের বামিয়ানায়  তালিবানরা বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করে। এই ঘৃণ্য কাজটি গোটা বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়। অবাক করা বিষয় হল বর্তমান ভারতের হিন্দু-নাৎসিবাদী সরকার ও তাদের সমর্থকরাও এই তালিবানি  নৃশংসতার নিন্দে করে।

আরও পড়ুন: বাংলায় তফসিলিদের হিন্দুকরণের ইতিহাস ও যোগেন মন্ডল/১

শুনতে বিষম লাগলেও নির্মোহ ইতিহাস বলে যে বর্তমান ভারতের হিন্দু নাৎসিবাদী সরকারের পূর্বপুরুষেরা খেলাচ্ছলে অগুন্তি বৌদ্ধ স্থাপত্য ধ্বংস করেছে, নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বৌদ্ধধর্মের অনুগামীদের। ইতিহাসের একজন নিরপেক্ষ ছাত্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলবে তালিবানদের কুকর্মের সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার বর্তমান হিন্দু নাৎসিবাদী সরকার ও তার সমর্থকদের নেই।

হিন্দু পুনরুত্থানের নামে হাজার হাজার বৌদ্ধ স্থাপত্য, বৌদ্ধ স্তুপ ও বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করা হয় ৮৩০ থেকে ৯৬৬ ক্রিষ্টাব্দের মধ্যে। প্রচুর দেশজ ও বিদেশি নথি, সাহিত্য ও নৃতাত্ত্বিক নথি বৌদ্ধদের উপর হিন্দু নাৎসিদের এই নৃশংসতার প্রমাণ দেয়।

শঙ্করাচার্যের ভূমিকা:

বৌদ্ধ সংস্কৃতি পুরোপুরিভাবে নিকেশ করে দেওয়ার লক্ষ্যে বুদ্ধ মুর্তি ধ্বংস করে গর্ব প্রকাশ করতেন শঙ্করাচার্যের মতো হিন্দু নাৎসি নেতা এবং আরও অনেক রাজা ও নেতারা। আজ তাদেরই উত্তরপুরুষেরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে এবং ভবিষ্যতে আর কোন কোন মসজিদ ধ্বংস করবে তার তালিকাও প্রকাশ করেছে। তালিবানরা বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করে যে নৃশংস কাজটি করেছে এটি তার থেকে কোন অংশে কম নয়।

হিন্দু শাসক পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ৮৪০০০ বৌদ্ধ স্তুপ ধ্বংস করেছিলেন, যেগুলো নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট অশোক (Romila Thapar, Ashoka and Decline of Mouryas, London, 1961, p 200)। এরপর একে একে মগধের বৌদ্ধকেন্দ্র গুলি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। কয়েক হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। বৌদ্ধদের স্তোত্র পাঠ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল বলে হিন্দু রাজা জালালুকা তার এলাকাধীন বৌদ্ধ বিহারগুলি ধ্বংস করে দেন (কলহন, রাজতরঙ্গিনী, ১:৪০)। কাশ্মীরে রাজা কিন্নর হাজার হাজার বৌদ্ধ বিহার ভেঙে বৌদ্ধ গ্রাম গুলি দখল করেন ব্রাহ্মণদের তুষ্ট করার জন্য (কলহন, ১:৮০)

আদি শঙ্করের ভূমিকা:

বিশাল সংখ্যক বৌদ্ধ বিহার ব্রাহ্মণ্যবাদীরা দখল করে হিন্দু মন্দিরে পরিণত করে দেয়। এই মন্দির গুলোতে শুদ্রদের প্রবেশাধিকার ছিল না। পূরাণের মত ছদ্মইতিহাস আষাঢ়ে গল্প লিখে বৌদ্ধ স্থানগুলি হিন্দু মন্দির হিসাবে দেখানো হয়ে আসছে।

ব্রাহ্মণ্যবাদীরা দখল করে নিয়ে  হিন্দু  মন্দির বানিয়েছে এমন কয়েকটি জায়গা যেখানে আগে বৌদ্ধ বিহার ছিল সেগুলো হল তিরুপতি, আহবালে, আন্দাবাল্লি, ইলোরা, পুরি, বাংলা (কালিঘাট), দিল্লি, বদ্রিনাথ, মথুরা, অযোধ্যা, শ্রীনগরি, বুদ্ধগয়া, শারনাথ, নালন্দা, গুড়িয়ালাম, নাগার্জুন কান্ডা, শ্রীসাইলাম এবং শবরীমালা (লর্ড আয়াপ্পা)।

নাগার্জুন কোন্ডাতে বৌদ্ধ মূর্তি ও স্মৃতিসৌধ  ধ্বংস করার ক্ষেত্রে অন্যতম বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলেন আদি শঙ্কর। নৃতত্ত্ববিদ লংহার্ষ্ট  নাগার্জুন কোন্ডাতে খননকার্য চালিয়ে এই বিষয়টি নথিবদ্ধ করেন তার বইতে। বইটির নাম  “Memoirs of the  Archaeological  Survey of  India No:54, The  Buddhist  Antiquities  of  Nagarjunakonda” (Delhi, 1938, p- 6)। (চলবে)

পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *