পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: আফ্রিকার মিশর। এশিয়ার সিরিয়া, ইরাক, লেবানন। লাতিন আমেরিকার ইকুয়েডর, চিলি, বলিভিয়া, কলোম্বিয়া। উত্তর আমেরিকার কানাডা। ইউরোপের স্পেন। গত দু-তিন মাস ধরে গণ বিক্ষোভ আর ধর্মঘটের মিছিল দেখছে পৃথিবী। গত শতকের উত্তাল ষাটের দশকের দিনগুলোই ফিরে আসছে যেন। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হতে চলেছে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার দেশ।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহ পার করল কানাডার রেল শ্রমিকদের ধর্মঘট, দেশ জুড়ে অচলাবস্থার আশঙ্কা
গত বছরে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনে সরগরম হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স। ‘ছবির দেশ, কবিতার দেশে’র দখল নিয়েছিল সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত অংশ। সেই আন্দোলনের রেশ এখনও চলছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল হয়ে উঠেছিল যে অনেকেই মনে করেছিলেন ফ্রান্সে ‘বিপ্লবী সংকট’-এর শুরু হয়ে গিয়েছে। তাদের ধারণা ঠিক ছিল কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। তবে তারপর থেকে একদিনও থেমে থাকেননি ফ্রান্সের মানুষ। মাকঁড় সরকারের একের পর এক শ্রমিক-বিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গোটা দেশ জুড়ে ধর্মঘট পালন করেন পরিবহণ শ্রমিকরা। সম্প্রতি ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে বিশাল মিছিল হয়েছে প্যারিসে। এ সবের মধ্যেই পেনশনের অর্থ কাটছাঁট করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ ৫ ডিসেম্বর সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেন গণ পরিবহণ শ্রমিকরা। তাতে সমর্থন জানান রেল শ্রমিকরাও। সেখানেই থামেনি।
তারপর একে একে হাসপাতাল কর্মচারী, দমকলকর্মী, বিদ্যুৎ দফতরের শ্রমিক এমনকি পুলিস সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমজীবীদের ইউনিয়ন ওই ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। দাবি না মেটা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে ঘোষণা করেছে সব পক্ষই। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ শ্রমিক এবং ৭০ শতাংশ সরকারি কর্মচারী এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছেন। শ্রমিকদের মেজাজ এতটাই জঙ্গি যে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ধর্মঘট চলতে পারে নতুন বছর পর্যন্ত।
প্প্রেসিডেন্ট মাকঁড় পরিবহণ শ্রমিকদের পেনশনের সমস্যা নিয়ে ভাববেন বলে ইঙ্গিত দিলেও, পরিস্কার কোনো ঘোষণা করতে পারেননি। কারণ, সেটা হলেই অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকরাও একই দাবি তুলবে। তবে তিনি হুমকি দিয়েছেন। মাকঁড় বলেছেন, ধর্মআঘটের অধিকার শ্রমিকদের থাকলেও তার সরকার ‘গুন্ডামি’ বরদাস্ত করবে না।
কিন্তু মাকঁড়ের হুমকিকে এখনও কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন আমল দেয়নি। যতদিন যাচ্ছে, একের পর এক ক্ষেত্র থেকে ধর্মঘটে সমর্থনের বার্তা আসছে। সম্প্রতি আইনজীবীরাও ধর্মঘটে সমর্থনের বার্তা দিয়েছেন, ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন।