‘এনআরসি আর ক্যাব আলাদা বিষয়’, রাজ্যসভায় বিভ্রান্তিকর মন্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হচ্ছে গোটা দেশের জন্য। সবাইকে এর আওতায় আনা হবে। কোনো ধর্মকে নিশানা করা হচ্ছে না। বুধবার রাজ্যসভায় জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এনআরসি ছাড়াও এদিন শাহ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে ফের মুখ খোলেন। পড়শি দেশগুলি থেকে হিন্দু , বৌদ্ধ, শিখ, চৈন. খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী যেসব সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে এদেশে এসেছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই ওই বিলকে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন। তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অমিত। এই সময় এনসিপি সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন জানতে চান, অন্য সব ধর্মের কথা বললেও শাহ কেন মুসলমানদের কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন? তার উত্তরে শাহ বলেন, এনআরসি-তে কোনো ধর্মকে নিশানা করা হচ্ছে না। এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল আলাদা বিষয়। গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
বস্তুত, এই কথার মধ্যে দিয়েই বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অমিত শাহ। অসমে এনআরসি-তে নাম না থাকা ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু হওয়ায় সেখানে বেশ চাপে বিজেপি। তাই তারা চাইছে দ্রুত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করিয়ে পড়শি দেশ থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিক বানিয়ে নিতে। সেক্ষেত্রে মুসলমানদের অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা যাবে। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হলেও একই সমস্যায় পড়বে বিজেপি। তারা জানে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে এসে যারা স্থায়ী ভাবে রয়েছেন, তাদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই বেশি। সংশোধনী বিল পাস হয়ে আইন হলে, তাদেরকেও মুচলেকা দিতে হবে, যে তারা ধর্মীয় হিংসার শিকার হয়েছিলেন। কারণ রুটিরুজির জন্য দেশান্তরীদের নাগরিক করে নেওয়ার কোনো সংস্থান নতুন বিলে নেই।
অন্যদিকে এনআরসি-তে নাম তোলার জন্য যারা প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে পারছেন না বা পারবেন না, তারা সকলে মোটেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নন। এদের বেশিরভাগই গরিব শ্রমজীবী। যাদের নানা কারণে নথি নেই বা হারিয়ে গেছে। অমিত শাহ বলেছেন, সকলকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির অন্তভ৪উক্ত করাই লক্ষ্য। কিন্তু যারা নথি জমা দিতে পারবেন না, তাদের নাম তো উঠবে না। তখন কী হবে তাদের? অনেকেই মনে করছেন, ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়ে সস্তা শ্রমিকের বাহিনী তৈরি করা হবে তাদের নিয়ে। নতুন ধরনের নাগরিক হবেন তাঁরা। সস্তা শ্রম দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে হয়তো যথাযথ ভারতীয় নাগরিক করে তুলতে পারবেন তাঁরা। সে সবই আপাতত রহস্যে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন মোদি-অমিতরা।