পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: স্থানীয় নেতারা গৃহবন্দি। কোনো বিরোধী দলের নেতাদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায়, ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার পর উত্তপ্ত কাশ্মীরে গত মাসে ঘুরতে আসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিনিধি দল। কেন্দ্র তাদের অনুমতিও দেয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করেন। জানা যায়, সেটা কোনো সরকারি সফর নয়। ম্যাডি শর্মা নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ব্রিটেনের একটি অসরকারি সংস্থার আমন্ত্রণেই কাশ্মীরে এসেছিলেন ওই সাংসদরা। আমন্ত্রণপত্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতিও ছিল।
আরও পড়ুন: শবরীমালা নিয়ে নিজেদের রায় বহাল রাখতে থমকাল সুপ্রিম কোর্ট
ওই আমন্ত্রণপত্র থেকে জানা যায়, গোটা ভ্রমণটি স্পনসর করেছে দিল্লির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অফ নন অ্যালাইনড স্টাডিজ(আইআইএনএস)। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তার মালিক ‘শ্রীবাস্তব গোষ্ঠী’। রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ বলছে, ওই গোষ্ঠী কোনো ব্যবসাই করে না। তারা একটি খবরের পোর্টালও চালায়। নিউ দিল্লি টাইমস। ওই পোর্টালের দফতরও একই ঠিকানায়।
কাশ্মীরে ইউরোপীয় সাংসদদের ঘুরতে আসার বেশ কিছুদিন আগে অক্টোবরের শুরুতে ইপিটুডে ডট কম নামে একটি পোর্টালে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পোর্টালটি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাংসদদের জন্য ম্যাগাজিন হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে থাকে। দেখা যায়, সেই রিপোর্টগুলি রাশিয়ার রাশিয়া টুডে পোর্টাল থেকে নেওয়া। ঘটনার গভীরে যায় ইউ ডিসইফোল্যাব নামে একটি অসরকারি সংগঠন। এরা ভুয়ো তথ্য নিয়ে কাজ করে থাকে। দেখা যায়, ইপিটুডের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে দিল্লির শ্রীবাস্তব গোষ্ঠীর। আরও দেখা যায়, ওই পোর্টাল ভয়েস অফ আমেরিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং নিবন্ধও প্রকাশ করে। ডিসইফোল্যাবের বক্তব্য, এদের লক্ষ্য হল মার্কিল ও রাশিয়ান সংবাদ ও নিবন্ধ প্রচুর পরিমাণে পুনরায় প্রকাশের মধ্যে দিয়ে গোপনে ভারতের স্বার্থ দেখা।
তারপর ঘটনা আরও এগোয়। দেখা যায়, এই ধরনের ২৬৫টি পোর্টাল ছড়িয়ে রয়েছে ৬৫টি দেশে। এগুলির মধ্যে রয়েছে টাইমসঅফজেনেভা ডট কম, দ্যপিকিংগেজেট, দ্যসিয়াটলস্টার, টাইমসঅফপিয়ংইয়ং ডট কম ইত্যাদি। এই সবকটি পোর্টালেরই কোনো বিলুপ্ত স্থানীয় পত্রিকার মতো নাম। সবেতেই একই বিষয় প্রকাশিত হয়। সেগুলো মূলত পাকিস্তান বিরোধী খবর এবং পাকিস্তান বিরোধী কোনো বিক্ষোভের খবর। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের জন্য তৈরি দুটি সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত এই শ্রীবাস্তব গোষ্ঠী।
এই বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্য হল, যাতে একই খবরের লিঙ্ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পেয়ে খবরটিকে সত্য বলে মনে করেন পাঠক। বা বিষয়টি খুবই জরুরি বলে মনে করেন পাঠক এবং যে পরিকল্পিত ভাবে করা হচ্ছে তা বুঝতে না পারেন। এবং এই ধরনের নানা তথ্য ও নিবন্ধ নানা স্তরে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে দুনিয়া জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জন প্রতিনিধিদের প্রভাবিত করা যায়।
এই গোটা নেটওয়ার্কের সঙ্গেই শ্রীবাস্তব গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছে ডিসইনফো ল্যাব। কিছুদিনের মধ্যেই তারা এই নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
সূত্র: দ্য ওয়ার এবং দ্য হিন্দু